Quantcast
Channel: QuranerAlo.com –কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all articles
Browse latest Browse all 985

নবী (সাঃ) যেভাবে হজ করেছেন পর্ব- ৫

$
0
0

নবী ﷺ যেভাবে হজ করেছেন  – পর্ব ৫

(জাবের রা. যেমন বর্ণনা করেছেন)

সংকলনঃ শাইখ মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দীন আল-আলবানী (রহ)অনুবাদঃ   মুফতী নুমান আবুল বাশার, ড. এটিএম ফখরুদ্দীন

পর্ব ১ ।  পর্ব ২  পর্ব ৩ ।  পর্ব ৪

১০ যিলহজের আমলে ধারাবাহিকতা রক্ষা না হলে কোন অসুবিধা নেই

জাবের রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পশু যবেহ করলেন, ‘অতপর মাথা মুন্ডন করলেন।’১২২ ‘কুরবানীর দিন মিনায়’১২৩  মানুষের (প্রশ্নোত্তরের) জন্য বসলেন। ‘সে দিনের’১২৪ আমলগুলোতে ‘আগে পরে হয়েছে’১২৫ এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

لاََ حَرَجَ لاَ حَرَجَ

‘কোন সমস্যা নেই, কোন সমস্যা নেই’১২৬

এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

وَلاَ حَرَج

কোনো সমস্যা নেই।

অন্য একজন এসে বলল, ‘আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি, তিনি বললেন,

وَلاَ حَرَج

কোনো সমস্যা নেই।

তারপর ‘আরেক জন এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে তাওয়াফ করেছি, তিনি বললেন,

وَلاَ حَرَج

কোনো সমস্যা নেই।১২৭

অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি পশু যবেহের আগে তাওয়াফ করেছি। তিনি বললেন,

 ِاذْبَحْ وَلاَ حَرَج

যবেহ কর, কোনো সমস্যা নেই।১২৮

তারপর অন্য আরেক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন,

ارْمِ ، وَلاَ حَرَجَ

নিক্ষেপ কর। কোন সমস্যা নেই।১২৯

‘অতপর আল্লাহর নবী ﷺ বললেন,

قَدْ نَحَرْتُ هَهُنَا وَمِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ

আমি এখানে যবেহ করলাম, আরা মিনা পুরোটাই যবেহের স্থান।’১৩০

মক্কার প্রতিটি অলিগলি চলার পথ এবং যবেহের স্থান।’১৩১ অতএব, তোমরা তোমাদের অবস্থানস্থলে থেকে পশু যবেহ কর।১৩২

ইয়াউমুন-নহর তথা ১০ তারিখের ভাষণ

জাবের রা. বলেন, ‘কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন,

•    أَيُّ يَوْمٍ أَعْظَمُ حُرْمَةً ؟ فَقَالُوْا : يَوْمُنَا هَذَا

‘সম্মানের দিক থেকে কোন্ দিনটি সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই দিনটি।

•    قَالَ : أَيُّ شَهْرٍ أَعْظَمُ حُرْمَةً ؟ فَقَالُوْا : شَهْرُنَا هَذَا

‘তিনি বললেন, কোন্ মাসটি সম্মানের দিক থেকে সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই মাসটি।

•    قَالَ : أَيُّ بَلَدٍ أَعْظَمُ حُرْمَةً ؟ فَقَالُوْا : بَلَدُنَا هَذَا

‘তিনি বললেন, কোন্ শহরটি সম্মানের দিক থেকে সবচে’ বড় ? তাঁরা বললেন, আমাদের এই শহরটি।’

•    قَالَ : فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَاٌم كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا

‘তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ আজকের এই দিন, এই শহর, এই মাসের ন্যায় সম্মানিত।’

•    هَلْ بَلَّغْتُ ؟ قَالُوْا : نَعَمْ . قَالَ : اَللَّهُمَّ اشْهَدْ .

‘আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ,  আপনি সাক্ষী থাকুন।’১৩৩

তাওয়াফে ইফাযা তথা বায়তুল্লাহ্‌র ফরয তাওয়াফ আদায়

‘অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বাহনে সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহ গেলেন এবং (বায়তুল্লাহ্র ফরয) তাওয়াফ করলেন। সাহাবীগণও তাওয়াফ করলেন।’‘রাসূলের সাথে যারা কিরান হজ করেছিলেন তাঁরা সাফা ও মারওয়ায় সা‘ঈ করেননি।’১৩৪ অতপর তিনি মক্কায় যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর আবদুল মুত্তালিব বংশের কাছে এলেন, ‘তারা’১৩৫  যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন,

انْزِعُوا بَنِى عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلاَ أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ

‘হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! বালতি ভর্তি করে পানি তুলে তা (হাজীদেরকে) পান করাও। তোমাদের কাছ থেকে পানি পান করানোর দায়িত্ব কেড়ে নেয়ার ভয় না থাকলে আমিও নিজ হাতে তোমাদের সাথে বালতি ভরে পানি তুলে তা পান করাতাম।’১৩৬   

অতপর তারা তাঁকে বালতি ভরে পানি দিলেন, আর তিনি তা পান করলেন।

হজের পর আয়েশা রা. এর উমরা পালন

জাবের রা. বলেন, ‘আয়েশা রা. ঋতুবতী হলেন। তখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া তিনি হজের আর সব আমল সম্পন্ন করলেন।১৩৭ তিনি বলেন, ‘যখন তিনি পবিত্র হলেন, তখন কা‘বার তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করলেন।’অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

قَدْ حَلَلْتِ مِنْ حَجِّكِ وَعُمْرَتِكِ جَمِيعًا

‘তুমি তোমার হজ ও উমরা উভয়টি থেকে হালাল হয়ে গিয়েছ।’১৩৮

আয়েশা রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, ‘আপনারা সবাই হজ ও উমরা করে যাবেন আর আমি কি শুধু হজ করে যাব?’১৩৯  তিনি বললেন,

إِنَّ لَكِ مِثْلَ مَا لَهُمْ

‘তোমারও তাদের মতই হজ ও উমরা হয়ে গিয়েছে।’১৪০

আয়েশা রা. বললেন, ‘আমি মনে কষ্ট পাচ্ছি, কেননা, আমি তো শুধু হজের পরে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি।’১৪১

জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। যখন আয়েশা. কিছু কামনা করতেন, তিনি সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন।১৪২ রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

فَاذْهَبْ بِهَا يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ فَأَعْمِرْهَا مِنَ التَّنْعِيمِ

‘হে আবদুর রহমান! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তাকে তানঈম থেকে উমরা করাও।’১৪৩  

অতপর, ‘আয়েশা রা. হজের পরে উমরা করলেন।’১৪৪  ‘তারপর ফিরে এলেন।’১৪৫  ‘আর এটা ছিল হাসবার রাতে১৪৬ ।’১৪৭

জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজে নিজের বাহনে আরোহন করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন এবং নিজের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন, যাতে লোকজন তাঁকে দেখতে পায় এবং তিনি ওপরে থেকে তাদের তত্ত্বাবধান করতে পারেন। আর যাতে তারা তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করতে পারে। কেননা লোকজন তাঁকে ঘিরে রেখেছিল।’১৪৮

জাবের রা. বলেন, ‘এক মহিলা তার একটি বাচ্চা তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এর কি হজ হবে? তিনি বললেন,

نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ

‘হ্যাঁ, আর তোমার জন্য রয়েছে পুরস্কার।’১৪৯

সমাপ্ত

……………………………………………………………………………………………..

Source: IslamHouse.Com

……………………………………………………………………………………………..


১২২। মুসনাদে আহমদ। 

১২৩। ইবন মাজা

১২৪। ইবন মাজা

১২৫। ইবন মাজা

১২৬। অর্থাৎ তোমার যে আমলগুলো বাকি আছে তা আদায় করে নাও। আর যেগুলো করেছো- তাতে যা আগে-পিছে হয়েছে তাতে কোনো অসুবিধে নেই।

১২৭। দারেমী, ইবন মাজা।

১২৮। তাহাবী। 

১২৯। মুসনাদে আহমদ।

১৩০। মুসনাদে আহমদ।

১৩১। আবূ দাউদ।

১৩২। মুসলিম।

১৩৩। মুসনাদে আহমদ।

১৩৪। আবূ দাউদ, তাহাবী।

১৩৫। দারমী।

১৩৬। অর্থাৎ

১৩৭। বুখারী, মুসনাদে আহমদ।

১৩৮। মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ।

১৩৯। বুখারী, মুসনাদে আহমদ। অন্য হাদীসে রয়েছে, লোকেরা দুই ইবাদাতের নেকী নিয়ে ফিরবে আর আমি কি এক কাজের নেকী নিয়ে ফিরবো? 

১৪০। মুসনাদে আহমদ।

১৪১। মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।

১৪২। মুসলিম।

১৪৩। ইবন আববাস রা. বলেন ‘আল্লাহর শপথ! মুশরিকদের প্রথা বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশা রা. কে যিলহজ মাসে উমরা করিয়েছেন। কুরাইশ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা বলতো, ‘যখন উটের লোম গজিয়ে বেশি হবে, পৃষ্ঠদেশ সুস্থ হবে এবং সফর মাস প্রবেশ করবে তখনই উমরাকারির  উমরা সহীহ হবে’। তারা যিলহজ ও মুহররম শেষ হওয়ার পূর্বে উমরা হারাম মনে করত’ (আবূ দাউদ : ১৯৮৭)।

১৪৪। বুখারী, মুসনাদে আহমদ।

১৪৫। মুসনাদে আহমদ।

১৪৬। সেটি হচ্ছে আইয়ামে তাশরীকের পরের রাত্রি। অর্থাৎ ১৪ তারিখের রাত। এটাকে মুহাস্সাবের রাতও বলা হয়। রাসূলুল্লাহ ও সাহাবীগণ ১৪ তারিখের রাত এ স্থানে যাপন করেছিলেন। যেসব জায়গায় পূর্বে শিরক বা কুফরী কর্ম অথবা আল্লাহর শত্রুতা প্রকাশ করা হত সেসব জায়গায় রাসূলুল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন। এই মর্মে তিনি মিনায় বলেন, ‘আমরা আগামীকাল বনূ কিনানার খায়ফে (অর্থাৎ মুহাস্সাব তথা হাসবা নামক স্থানে) যেতে চাচ্ছি, যেখানে তারা কুফরীকর্মের ওপর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল, আর তা ছিল এই যে, কুরাইশ ও বনূ কিনানা, বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধে এই মর্মে শপথ করেছিল যে, তাদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করবে না, বেচাকেনা করবে না, যতক্ষণ না তারা নবীকে তাদের কাছে সোপর্দ করে (বুখারী : ১৫৯০)। ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ এর অভ্যাস যে, তিনি কুফরের নিদর্শনের স্থানসমূহে তাওহীদের নিদর্শন প্রকাশ করতেন (যাদুল মা‘আদ)।

১৪৭। মুসলিম। 

১৪৮। মুসলিম, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ।

১৪৯। তিরমিযী, ইবন মাজা। বাচ্চাটিকে বহন করা এবং তাকে মুহরিমরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকে সেসব কাজ থেকে বিরত রাখার বিনিময়ে এই নেকী (নাববী রহ.)।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 985

Trending Articles