Quantcast
Channel: QuranerAlo.com –কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all articles
Browse latest Browse all 985

সাহাবীগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার বিধান

$
0
0

Wallpaper-Black-Background-Red-Color-Paint-Explosion-Burst-Red-Black-768x1366

মুফতি : শেইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

প্রশ্ন: আমি আমার একজন বন্ধুর সাথে সাহাবীদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তখন সে আমাকে বলল, আমাদের যে কোনো ব্যক্তি যেকোনো একজন সাহাবীকে ঘৃণা করতে পারে। এটি ইসলামের পরিপন্থী হবে না। তবে তা লোকটিকে ঈমান থেকে বের করে দিলেও ইসলাম থেকে বের করবে না। আপনার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করে জানতে চাই।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ

নিজের জীবনকে দীন ও দুনিয়ার কল্যাণের কাজে লাগানোর পরিবর্তে নবীদের পর  সর্বোত্তম মাখলূক সাহাবীদের পিছনে লাগা, তাদের পারস্পরিক মতবিরোধ ও বিবাদকে কেন্দ্র করে দুর্গন্ধ ছড়ানো, তাদের সমালোচনা করা, তাদের বিষয়ে অরুচিকর মন্তব্য করা, তাদের নিয়ে অহেতুক চিন্তা-গবেষণা করা এবং তাদের দোষ চর্চা করা জঘন্যতম অপরাধ। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য, অধঃপতন, হীনমন্যতা ও অপদস্থতা আর কিছুই হতে পারে না।

রাসূলের সাহাবীগণকে গালি দেওয়া বা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কোনো কারণ বা সুযোগ কারও জন্যই নেই। কারণ তাদের রয়েছে অনেক ফযীলত ও মর্যাদা, তারা আমাদের চিন্তা চেতনার অনেক ঊর্ধ্বে। তারাই দীনের সাহায্যকারী, দীনের ধারক ও বাহক। তারাই দীনকে মানুষের মধ্যে তুলে ধরেছেন এবং তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তারাই মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন। কুরআন ও সুন্নাহের ধারক-বাহক হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকেই বাচাই করেন। তারা তাদের নিজেদের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে কোনো প্রকার কার্পণ্য করেন নি। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকেই তাঁর নবীর সাথী-সঙ্গী হিসেবে কবুল করেছেন। মুনাফিক- যারা আল্লাহর দীনকে ভালোবাসে না এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস করে না, তারা ছাড়া আর কেউ সাহাবীদের গালি দিতে এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতে পারে না।

বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি আনসারী সাহাবীদের বিষয়ে বলেন,

«الأنصار: لا يحبهم إلا مؤمن، ولا يبغضهم إلا منافق، فمن أحبهم أحبه الله، ومن أبغضهم أبغضه الله».

“আনসার, মুমিনগণই তাদের মহব্বত করেন এবং মুনাফিকরাই তাদের অপছন্দ ও ঘৃণা করে। যে তাদের মহব্বত করল, আল্লাহ তাকে মহব্বত করলেন। আর যে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহ তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫]

আনসারদের সাথে শত্রুতা পোষণ করাতে যদি লোকটির ঈমান না থাকে এবং মুনাফিক সাব্যস্ত হয়, তাহলে যে ব্যক্তি আনসার, মুহাজিরসহ সকল সাহাবী ও তাবে‘ঈদেরকে গালি দেয়, তাদের অভিশাপ দেয়, তাদের কাফির বলে আখ্যায়িত করে এবং তাদের যারা মহব্বত করে ও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের কাফির বলে, যেমন- রাফেযী (শিয়া) সম্প্রদায়; তাদের ঈমান কীভাবে অক্ষুণ্ণ থাকবে? বরং তারাই মুনাফিক, কাফির ও ঈমান থেকে বিচ্যুত হওয়ার অধিক যুক্তিযুক্ত।

ইমাম তাহাওয়ী রহ. আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা সম্পর্কে বলেন-

আমরা রাসূলের সাহাবীদের মহব্বত করব। তাদের কোনো একজনের মহব্বতের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করব না এবং তাদের কারও থেকে দায়মুক্তিও ঘোষণা করব না। যারা সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা পোষণ করে এবং সমালোচনা করে, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করব। আমরা তাদের ভালো গুণগুলোর আলোচনা করব। তাদের মহব্বত করা দীন, ঈমান ও ইহসান , পক্ষান্তরে তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা কুফরি, নিফাকি ও হঠকারিতা।

শাইখ সালেহ আল-ফাওযান বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম-এর আহলে বাইতদের মহব্বত করা।

আর নাওয়াসেব: তারা রাসূলের সাহাবীগণকে মহব্বত করে কিন্তু আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। (নাওয়াসেব, শব্দটি নাসেবী এর বহুবচন। যার অর্থ, শত্রুতা পোষণকারী) এ কারণেই তাদের নাওয়াসেব বলা হয়। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের পরিবার-পরিজনের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।

আর রাফেযী (শিয়া)রা তাদের সম্পূর্ণ উল্টো। তাদের ধারণা অনুযায়ী তারা আহলে বাইতকে মহব্বত করে, তারা রাসূলের সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তাদের অভিশাপ দেয়, তাদের দোষ চর্চা করে এবং তাদেরকে কাফির বলে।

যে ব্যক্তি সাহাবীগণ ঘৃণা করে, সে দীনকে ঘৃণা করে। কারণ, তারা হলো, দীন ও ইসলামের ধারক-বাহক ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী। যারা তাদের ঘৃণা করে তারা মূলত ইসলামকেই ঘৃণা করে। এটি তাদের অন্তরে ঈমান এবং ইসলামের প্রতি ভালোবাসা না থাকারই প্রমাণ।

এটি একটি মহান মূলনীতি। প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরয হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে জানা ও বুঝা।  সাহাবীগণকে মহব্বত করা ও তাদের প্রতি সম্মান দেখানো। কারণ, এটিই ঈমান। তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা অথবা তাদের কাউকে ঘৃণা করা কুফরি ও নিফাকি। তাদের মহব্বত করা রাসূলকেই মহব্বত করার নামান্তর আর তাদের ঘৃণা করা রাসূলকেই ঘৃণা করার অপর নাম। দেখুন: শরহুল আকীদাতু-তাহাবীয়্যাহ

রাসূলের সাহাবীগণকে ঘৃণা করার ব্যাপারে কোনো কোনো আলেম সুন্দর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। দিয়েছেন। তারা বলেছেন- যদি দুনিয়াবী কোনো বিষয়ে তাদের ঘৃণা করে তাহলে তা কুফরি ও নিফাকি হিসেবে গণ্য হবে না। আর যদি ঘৃণা করা দীনি কারণে হয়, তারা রাসূলের সাহাবী -এ বিবেচনায় তাদের ঘৃণা করে তাহলে তা অবশ্যই কুফরি ও নিফাকি। এ ব্যাখ্যা খুবই সুন্দর। এটি আমাদের উল্লিখিত বিষয়টিকে স্পষ্ট করে এবং তাগীদ দেয়।

আবু যুর‘আ আর-রাযী রহ. বলেন, যখন তুমি দেখবে কোনো লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো সাহাবীকে খাটো করে দেখছে, তাহলে মনে রাখবে সে অবশ্যই যিনদিক (গোপন কাফের)।

ইমাম আহমদ রহ. বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সাহাবীকে অপবাদ দেয়, সে ইসলামের ওপরই অপবাদ দিল।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “যারা সাহাবীদের এমন সমালোচনা করে যা তাদের আদালত বা দীনদারীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, যেমন বলল, কৃপণ, দুর্বল, স্বল্প জ্ঞানী ইত্যাদি এ ধররেনর সমালোচনার কারণে লোকটি তা‘যীর বা বিচারকের বিবেচনাপ্রসূত অনির্ধারিত শাস্তি পাবে। তবে শুধু এ কারণে তাকে কাফির বলা যাবে না। যে সব আলেম সাহাবীদের সমালোচকদের কাফির বলে না, তাদের কথার অর্থও এটাই। (অর্থাৎ যারা এ ধরনের সমালোচনা করে বা মন্তব্য করে তাদের কাফির বলা যাবে না।)

তবে যারা সাধারণভাবে সাহাবীদের লা‘নত করে বা তাদেরকে খারাপ বলে, এদের বিধান কী তা নির্ধারণের ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ এ লা‘নতটি কি রাগ থেকে উত্থিত নাকি তাদের বিশ্বাস থেকেই উদ্ভূত তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

আর যারা এ সীমাটিও অতিক্রম করে এবং এমন কথা বলে যে, সাহাবীরা রাসূলের পর দশোর্ধ্ব  সাহাবী ছাড়া বাকীরা মুরতাদ হয়ে গেছে অথবা তাদের প্রায় সবাই ফাসেক হয়ে গেছে, যারা এ ধরনের কথা বলবে তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এটি কুরআনের একাধিক স্থানে সাহাবীদের যেসব প্রশংসা ও তাদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা এসেছে, তার সরাসরি অস্বীকার করা; বরং এ ধরনের লোকের কাফির হওয়া বিষয়ে যে সন্দেহ করবে তার কাফির হওয়াও নির্ধারিত।

কারণ, এ ধরনের কথার অর্থ হলো,

  • কুরআন ও সন্নাহের ধারক-বাহক যারা তারা কাফির ফাসেক।
  • আর যে আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা উত্তম উম্মত”, উত্তম যুগ, প্রথম যুগ তাদের সবাই কাফির ও ফাসেক।
  • আর এ উম্মত সবচেয়ে নিকৃষ্ট উম্মত। আর এ উম্মতের পূর্ব পুরুষরা সবাই নিকৃষ্ট।

বস্তুত: এ ধরনের লোকদের কাফির হওয়া ইসলামের বিধান অনুযায়ী সুস্পষ্ট ও স্বাভাবিক।

আর তাই এ ধরনের কোনো কথাবার্তা যাদের নিকট থেকে প্রকাশ পায়, তাদের অধিকাংশকে তুমি দেখতে পাবে  যে তারা যিনদিক (গোপন কাফের বা মুনাফিক)। যিনদিকদের অনেকেই তাদের মতামতকে অন্য কিছুর আড়ালে গোপন করে রাখে। কিন্তু তাদের শাস্তি প্রকাশ হয়েই পড়ে।

অসংখ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত তাদের চেহারা জীবনকালে ও মৃত্যুর সময় শূকরের  চেহারায় রূপান্তিরিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে আলেমগণের কাছে যা এসেছে তারা তা জমা করেছেন। তাদের মধ্যে হাফেয সালেহ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহেদ আল-মাকদিসির কিতাব- النهي عن سب الأصحاب ، وما جاء فيه من الإثم والعقاب -বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মোটকথা, সাহাবীগণের সমালোচনাকারীদের মধ্যে একদল এমন আছে যাদের কুফরির ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আরেক দল এমন আছে যাদের কাফির বলা যাবে না। আর একদল এমন আছে যাদের কুফর ও ঈমানের ব্যাপারে আলেমগণ ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন।” [আস-সারিমুল মাসলুল ‘আলা শাতিমির রাসূল’‌: পৃ: ৫৯০-৫৯১]

তকী উদ্দিন আস-সুবুকী  বলেন, এ আলোচনার ফলাফলের ওপর কতক সাহাবীকে গালি দেওয়ার বিষয়টি নির্ভরশীল। কারণ সকল সাহাবীকে গালি দেওয়া অবশ্যই কুফরি। অনুরূপভাবে কোনো একজন সাহাবীকে সাহাবী হওয়ার কারণে গালি দেওয়াও কুফরি। কারণ, এতে রসূলের সাহচর্য গ্রহণকে খাটো করে দেখা হয়। ফলে যারা সাহাবীদের গালি দেয় তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সুতরাং সাহাবীগণের গালিদাতাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম তাহাবী রহ.-এর কথা‘রাসূলের সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা পোষণ  করা কুফরি।’ এ অর্থেই নিতে হবে। কারণ, সন্দেহ নেই যে, সামগ্রিকভাবে সাহাবীদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা কুফরি।

তবে যদি কোনো বিশেষ সাহাবীকে সাহাবী হওয়ার কারণে নয়; বরং ঐ সাহাবীর বিশেষ কোনো গুণের কারণে গালি দেয় এবং ঐ সাহাবী মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছে, আর আমরা তার ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত। যেমন, রাফেযী (শিয়া) সম্প্রদায়  যারা আবু বকর ও ওমরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গালি দেয়। এ ব্যাপারে অর্থাৎ যারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গালি দেয় তাদের কুফরির ব্যাপারে কাযী হুসাইন রহ. দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। মতানৈকের কারণ- কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তি কখনও কখনও বিশেষ কারণে গালি দিয়ে থাকে, আবার কখনও কখনও কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দুনিয়াবী বা এ ধরনের কোনো কারণে ঘৃণা করে থাকে, এর দ্বারা তাকে কাফির বলা জরুরী হয় না। তবে আবুবকর ও উমার এ দু’জনের যে কোনো একজনকে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হওয়ার কারণে গালি দেয়, তবে নিঃসন্দেহে তা কুফরি বলে বিবেচিত হবে। এমনকি তাদের উভয়ের চেয়ে কম সাহচর্যের অধিকারী কোনো সাহাবীকেও যদি রাসূলের সাহাবী হওয়ার কারণে কেউ গালি দেয়, তবে সে অকাট্যভাবে কাফির বলে বিবেচিত হবে। [ফতাওয়া আস-সুবুকী ৫৭৫/২]

আল্লাহই ভালো জানেন।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 985

Trending Articles