সুপ্রিয় ভাই , আমরা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করব।আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
১ম প্রশ্নঃ আমার, আপনার এবং পৃথিবীর সব কিছুর স্রষ্টা ও পালনকর্তা কে?
উত্তরঃ আমার, আপনার এবং সারা জাহানের একমাত্র স্রষ্টা ও পালনকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। তিনি দয়া করে আমাকে সহ পৃথিবীর প্রতিটি বস’ সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছু লালন-পালন করছেন।
২য় প্রশ্নঃ আমাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার নাম কী?
উত্তরঃ আমাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার নাম হল ইসলাম। ইসলাম মানে হল, আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর প্রতি ভালবাসা রেখে এবং তাঁর কাছেই আশা ও আকাংখা নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
৩য় প্রশ্নঃ আমরা কিভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি?
উত্তরঃ আমরা এ বিশাল সৃষ্টিজগতের দিকে তাকালে আল্লাহর পরিচয় পাই। ঐ সুবিশাল আকাশ, এই বিস্তীর্ণ পৃথিবী, চাঁদ, সুরুজ, দিন ও রাতের আবর্তন ইত্যাদির দিকে গভীরভাবে তাকালে বুঝতে পারি এ বিশ্বচরাচর একাকি সৃষ্টি হয়ে যায়নি। বরং এসবের পেছনে রয়েছে একজন সুনিপুন স্রষ্টার হাত। আর তিনি হলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা।
৪র্থ প্রশ্নঃ আল্লাহ কোথায় আছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা সাত আসমানের উপর আরশে আযীমে অবস্থান করেন। তিনি তাঁর সব সৃষ্টি থেকে আলাদা।
৫ম প্রশ্নঃ আল্লাহ কি সত্বাগতভাবে আমাদের সাথে থাকেন?
উত্তরঃ আল্লাহ স্বীয় সত্বায় আরশে আযীমের উপর অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁর জ্ঞান আমাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে। তিনি সব কিছু দেখছেন। সব কিছু শুনছেন। তার শক্তি এবং ক্ষমতা সব জায়গায় বিরজমান। আল্লাহ তা’আলা মূসা ও হারুন (আলাইহিমাস সালাম) কে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা ভয় পেওনা। আমি তোমদের সাথে আছি। সব কিছু দেখছি এবং শুনছি।” (সূরা ত্বাহাঃ ৪৬)
৬ষ্ঠ প্রশ্নঃ আল্লাহর ওলী কারা?
উত্তরঃ ওলী শব্দের অর্থ, আল্লাহর প্রিয়পাত্র বা বন্ধু। তারাই আল্লাহর প্রিয়পাত্র হন যারা সত্যিকার ভাবে আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনা করেন, সৎ আমল করেন, তাঁর আদেশগুলো বাস-বায়ন করেন এবং নিষেধকৃত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং কুরআন ও হাদীসকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন।
৭ম প্রশ্নঃ কী পদ্ধতিতে আমাদের আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করা উচিৎ?
উত্তরঃ আমাদের কর্তব্য হল, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করব যাতে সবটুকু ইবাদত শুধু তাঁর জন্যই নিবেদিত হয়। অন্য কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে শরীক বা অংশিদার করা না হয়।
৮ম প্রশ্নঃ কী দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে নবীদেরকে প্রেরণ করেছিলেন?
উত্তরঃ যুগে যুগে সকল নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণের উদ্দেশ্য হল, তারা মানুষকে এ আহবান করবেন যে, মানুষ যেন কেবল আল্লাহর ইবাদাত করে এবং তার সাথে অন্য কাউকে শরীক না করে।
আরো উদ্দেশ্য হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট অজ্ঞতার অযুহাত পেশ করতে না পারে।
৯ম প্রশ্নঃ ইসলাম কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তার আনুগত্য করা এবং শির্ক ও শিরকপন্থীদের থেকে সর্ম্পক ছিন্ন করাকেই ইসলাম বলে।
১০ম প্রশ্নঃ ইসলামের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫টি। সেগুলো হলঃ
১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল- এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করা।
২) নামায প্রতিষ্ঠা করা।
৩) যাকাত আদায় করা।
৪) রামাযান মাসে রোযা পালন করা।
৫) যে ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম তার জন্য হজ্জ সম্পাদন করা।
১১তম প্রশ্নঃ ঈমান কাকে বলে?
উত্তরঃ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়নকে ঈমান বলে।
১২তম প্রশ্নঃ ঈমান কি বাড়ে ও কমে?
উত্তরঃ হাঁ। কথা ও কাজ অনুযায়ী ঈমান বাড়ে ও কমে।
১৩তম প্রশ্নঃ ঈমান বাড়ে ও কমে এ কথার অর্থ কী?
উত্তরঃ একথার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি যত বেশী আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং ভাল কাজ করবে তার ঈমান তত বৃদ্ধি পাবে। আর যে যত পাপ ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়বে তার ঈমান তত কমবে।
১৪তম প্রশ্নঃ ঈমানের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ঈমানের মূল স্তম্ভ ৬টি। সেগুলো হলঃ
১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ২) ফেরেশ্তাগণের প্রতি বিশ্বাস ৩) আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস ৪) নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস ৫) পরকালের প্রতি বিশ্বাস ৬) ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
১৫তম প্রশ্নঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে, এ বিশ্বাস করা যে আল্লাহ তা’আলা রিযিক দাতা, সৃষ্টিকর্তা, সব কিছুর পরিচালক, আসমান ও যমিনের সমস্ত রাজত্ব এবং কর্তৃত্ব তাঁর হাতে। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার একমাত্র অধিকারী; অন্য কেউ নয়। তাঁর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম এবং তিনি অসংখ্য পরিপূর্ণগুণের অধিকারী।
১৬তম প্রশ্নঃ ফেরেশ্তা কারা?
উত্তরঃ তারাঁ আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যাদেরকে তিনি নূর (আলো) দ্বারা সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে যে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন বা যে সব কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পরিপূর্ণভাবে পালন করেন। তাতে বিন্দুমাত্র অবাধ্যতা করেন না।
১৭তম প্রশ্নঃ আসমানী গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হল, আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অনেক নবী প্রেরণ করেছেন যেমন, নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা, (আলাইহিমুস সালাম) প্রমূখ । তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির দিকনির্দেশনার জন্য আসমানী গ্রন্থ নাজিল করেছেন। যেমন, তাওরাত, ইন্জিল, যাবূর,ইত্যাদি। নবীগণ তাদের সমসাময়িক মানবগোষ্ঠিকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য আহবান করেছেন এবং শিরক করা থেকে নিষেধ করেছেন।
নবী-রাসূলদের ধারাবাহিকতার সব শেষে আগমন করেছেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করেছেন আল কুরআন। এ কুরআনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল আসমানী গ্রন্থকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তিনি এ কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্ববায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের নবুওয়তী যিন্দেগীতে। তাই যে কোন ইবাদত অবশ্যই হতে হবে কুরআনের শিক্ষা এবং নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ তথা তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে।
১৮তম প্রশ্নঃ পরকালে বিশ্বাসের অর্থ ?
উত্তরঃ পরকালে বিশ্বাসের অর্থ হল, একথা বিশ্বাস করা যে, মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়েছেন। সে মেয়াদ শেষ হলে সবাইকে অবশ্যই মৃত্যু বরণ করতে হবে। এরপর আল্লাহ সকলকে কবর থেকে পূণরুত্থিত করবেন এবং কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়ার পর প্রত্যেককে তাদের কাজের যথোপযুক্ত প্রতিদান দিবেন। ভাল কাজের বিনিময়ে তাদেরকে দেয়া হবে ভাল প্রতিদান। আর পাপ ও অন্যায়ের বিনিময়ে প্রদান করবেন কঠিন শাস্তি।
আমাদেরকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যে মহান স্রষ্টা এ সুন্দর দেহাবয়বকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃজন করেছেন তিনি পূণরায় তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
১৯তমঃ ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রাত বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ এর অর্থ হল, এ জীবনে ভাল-মন্দ যাই ঘটুক না কেন এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তা অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। কারণ, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত শুক্ষভাবে অনেক পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।
২০তম প্রশ্নঃ “লা-ইলাহা ইল্লালাহ” এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তরঃ ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। বরং যাবতীয় ইবাদাত ও উপাসনা পাওয়ার একমাত্র হকদার তিনি। তিনি ব্যতিরেকে যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে সবই মিথ্যা এবং ভ্রান্ত।
২১তম প্রশ্নঃ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা কী?
‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা হল, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি যে সকল সংবাদ ও তথ্য দান করেছেন সেগুলোকে নির্ভূল ও সত্য বলে মেনে নেয়া। তিনি যেসকল বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন বা সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর দেখানো পদ্ধতি ব্যতিরেকে ইবাদত না করা।
২২তম প্রশ্নঃ ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর কোন শর্ত আছে কী?
উত্তরঃ তাওহীদের স্বীকৃতি জ্ঞাপক এই মহান বাণীটির জন্য ৮টি শর্ত রয়েছে। সে শর্তগুলো হলঃ
১) ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর অর্থ জেনে-বুঝে স্বীকৃতি দেয়া। এর অর্থ বা তাৎপর্য না বুঝে পাঠ করলে কোন লাভ হবে না।
২) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে স্বীকৃতি দেয়া। এতে কোন সন্দেহ ও অস্পষ্টতা রাখা যাবে না।
৩) নির্ভেজাল মনে স্বীকৃতি দেয়া। কোন শিরকী ধ্যান-ধারণা নিয়ে পাঠ করলে কোন লাভ নেই।
৪) সত্য মনে করে স্বীকৃতি দেয়া। কপটতা থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য।
৫) ভালবাসা সহকারে স্বীকৃতি দেয়া। মনের মধ্যে ঘৃণা বা ক্রোধ জমা রেখে স্বীকৃতি দিলে কোন উপকার হবে না।
৬) পূর্ণ আনুগত্যের মন-মানষিকতা নিয়ে স্বীকৃতি দেয়া। পরিত্যাগ করার বা অমান্য করার মানষিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
৭) মনেপ্রাণে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা। এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করা বা প্রশ্নতোলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
৮) আল্লাহ ছাড়া অন্য যত কিছুর ইবাদাত করা হচ্ছে সব অস্বীকার করা।
২৩তম প্রশ্নঃ আল্লাহা তা’আলা আমাদেরকে যে সব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বড়?
উত্তরঃ সে বিষয়টি হল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
২৪তম প্রশ্নঃ তাওহীদ কী?
উত্তরঃ তাওহীদ হল, একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং আল্লাহ তা’আলা নিজে কুরআনে বা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে তার যে সকল নাম ও গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে কোনরূপ ব্যাখ্যার আশ্রয় না নিয়ে সহজভাবে মেনে নেয়া।
২৫তম প্রশ্নঃ তাওহীদ কত প্রকার?
উত্তরঃ তাওহীদ তিন প্রকারঃ ১) তাওহীদুর রুবূবিয়া ২) তাওহীদুল উলূহিয়া ৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাত।
২৬ তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুর রুবূবিয়া’ কাকে বলে?
উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক দান করা, বৃষ্টি বর্ষণ, জীবন দান, মৃত্যু দান ইত্যাদি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক মনে করাকে তাওহীদে রুবূবিয়া বলা হয়।
২৭তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুল উলূহিয়া’ কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ, দু’আ, মানত ইত্যাদি বান্দার যত প্রকার ইবাদত-বন্দেগী হতে পারে সবকিছুর একমাত্র অধিকারী আল্লাহকে মনে করাকে তাওহীদে উলূহিয়া বলা হয়।
২৮তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা নিজে কুরআনে অথবা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে আল্লাহর পরিচয় সর্ম্পকে যে সব কথা বলেছেন সেগুলো মনে প্রাণে মেনে নেয়া। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কোন গুণকে অস্বীকার করা যাবে না বা তাতে কোন শব্দগত বা অর্থগত বিকৃতী সাধন করা যাবে না। কিংবা সেগুলোর কোন ধরণ বা আকৃতি কল্পনা করা যাবেনা। বরং এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, এ সমস্ত গুণাবলী অবশ্যই সত্য কিন্তু তা মহান আল্লাহর জন্য যেমন হওয়া উচিৎ তেমনই।
২৯তম প্রশ্নঃ ইবাদাত বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা যে সমস্ত কথা বা কাজে খুশী হন চাই তা প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক তাকে ইবাদাত বলে।
৩০তম প্রশ্নঃ ইবাদতের কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ ইবাদতের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলঃ
১) ইখলাস থাকা অর্থাৎ যে কোন কাজ নির্ভেজাল চিত্তে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাজ করা।
২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পদ্ধতি অনুসারে সে কাজটি করা।
৩১তম প্রশ্নঃ ইবাদাতের কতিপয় উদাহরণ দিন।
উত্তরঃ নামায রোযা, হজ্জ, যাকাত, ভয়, আশা, সাহায্য চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা ইত্যাদি যে সব কাজ আল্লাহ তা’আলা আমদেরকে করার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন সবই আল্লাহর ইবাদাত।
৩২তম প্রশ্নঃ আল্লাহ তা’আলা আমদেরকে যে সব কাজ থেকে নিষেধ করেছেন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কোনটি?
উত্তরঃ সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং মারাত্মক হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা।
৩৩তম প্রশ্নঃ শির্ক কী?
উত্তরঃ কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা শির্ক। যেহেতু মহান আল্লাহ তো আমাকে, আপনাকে তথা সমগ্র বিশ্বকে একাই সৃষ্টি করেছেন।
৩৪তম প্রশ্নঃ শির্ক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ শির্ক তিন প্রকারঃ ১) বড় শির্ক ২) ছোট শির্ক ৩) গোপন শির্ক।
৩৫তম প্রশ্নঃ বড় শির্ক বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ কোন ইবাদাত যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর নামে করা হয় তবে সেটা হল বড় শির্ক। কোন মুসলমান এ শির্ক করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় এবং তার পূর্বের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। এমনকি তাওবা না করে এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৩৬তম প্রশ্নঃ বড় শির্ক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ বড় শির্ক চার প্রকার। তা হলঃ
১) দু’আর ক্ষেত্রে শির্ক করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট কিছু চাওয়া বা বিপদাপদ থেকে রক্ষা পওয়ার জন্য দুআ করা বড় শিরক।
২) নিয়তের ক্ষেত্রে শির্ক করা। ইবাদাত করতে গিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করা।
৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে শির্ক। আল্লাহর আদেশ বাস্ববায়ন করার পরিবর্তে কোন পীর, ওলী-আওলিয়া বা অন্য কোন সৃষ্টির উপাসনা করা।
৪) ভালোবাসার ক্ষেত্রে শির্ক। যে ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ভালবাসা পাওয়ার উপযুক্ত সে ক্ষেত্রে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা।
৩৭তম প্রশ্নঃ ছোট শির্ক কী?
উত্তরঃ যে কাজ করলে বড় শিরকে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেটাই ছোট শির্ক। যেমন, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্যে কিংবা দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করা হলে তা ছোট শিরকে রূপান্তুরিত হয়।
এ জাতীয় কাজ করলে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হবে না বটে কিন্তু সে অবশ্যই একটি বড় ধরণের পাপ সম্পাদন করল। এ জন্য যে কোন ভাল কাজ করার আগে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে।
৩৮তম প্রশ্নঃ গোপন শির্ক কী?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীরের ব্যপারে অসন্তোষ প্রকাশ করাই হল গোপন শির্ক।
৩৯তম প্রশ্নঃ গোপন শির্কের প্রমাণ কী?
উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “গভীর রাতে একখণ্ড কালো পাথরের উপর দিয়ে একটি কালো পিঁপড়া হেঁটে গেলে তার পায়ের যে আওয়াজ হয় তার চেয়ে আরো বেশী নীরবে আমার উম্মতের মধ্যে গোপন শির্ক প্রবেশ করবে।”
৪০তম প্রশ্নঃ কুফুরী কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ কুফরী দুপ্রকারঃ
১) বড় কুফরী। যেমন, কেউ আল্লাহ অসি-ত্বকে অস্বীকার করলে বা ইসলামী আদর্শকে ঘৃণা করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এ জতীয় কুফুরী করার কারণে মানুষ ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যায়।
২) ছোট কুফরী। যেমন, কেউ আল্লাহকে অস্বীকার করল না কিন’ সে আল্লাহর কোন অবদানকে অস্বীকার করল। এ ক্ষেত্রে সে ইসলাম থেকে বের হবে না কিন’ তা অবশ্যই বিরাট গুনাহের কাজ করল।
৪১তম প্রশ্নঃ বড় কুফরী কয় প্রকার?
উত্তরঃ বড় কুফরী পাঁচ প্রকারঃ
১) অস্বীকার করার মাধ্যমে কুফুরী করা। আল্লাহ, রাসূল, ফেরেশ্তা, ইসলামী কোন বিধান যেমন, নামায, পর্দা ইত্যাদি বিষয়কে সরাসরি অস্বীকার করা বড় কুফুরী। যার কারণে একজন মানুষ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
২) অহংকারের মাধ্যমে কুফুরী করা। যেমন, ইসলাম একটি ‘চিরন্তন সত্য জীবন ব্যবস্থা’ এ কথা জানার পরও অহংকার বশতঃ ইসলাম বা ইসলামের রীতি-নীতিকে এড়িয়ে চলা।
৩) সন্দেহ পোষণ করা।
৪) অবাধ্যতা করার মাধ্যমে কুফুরী করা।
৪) মুনাফেকী করা তথা মনের মধ্যে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ লুকিয়ে রেখে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করা। এটা জঘণ্যতম কফুরী।
৪২তম প্রশ্নঃ মুনাফেকী কয় প্রকার?
উত্তরঃ ১) বিশ্বাসগত ২) কর্মগত।
৪৩তম প্রশ্নঃ বিশ্বাসগত মুনাফেকীর অর্থ কী? তা কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ বিশ্বাসগত মুনাফেকীর অর্থ হল, মূলত সে ইসলামকে বিশ্বাসই করেনা। বরং বাহ্যিকভাবে ইসলামকে মেনে চলে মনে হলেও বিশ্বাসগতভাবে সে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী। ইসলামের ক্ষতি করার জন্য সে এ বেশ ধারণ করেছে।
মুনাফেকী ছয় প্রকার। যেমনঃ
১) আল্লাহ ও রাসূলকে অস্বীকার করা।
২) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবনাদর্শ ইসলাম এবং ইসলামের মৌলগ্রন্থ কুরআনকে অস্বীকার করা।
৩) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ঘৃণা করা।
৪) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবনার্দশকে ঘৃণা করা।
৫) ইসলামকে অপমান করা হলে বা ইসলামের পতন হলে মনে মনে আনন্দিত হওয়া।
৬) ইসলামের বিজয় বা ইসলামের বিস্তার লাভ করাকে অপছন্দ করা।
৪৪তম প্রশ্নঃ কর্মগত মুনাফেকীর বৈশিষ্টগুলো কী কী?
উত্তরঃ কর্মগত মুনাফেকীর চারটি বৈশিষ্ট রয়েছে। সেগুলো হলঃ
১) কথায় কথায় মিথ্যা বলা।
২) ওয়াদা ভঙ্গ করা বা কথা দিয়ে কথা না রাখা।
৩) আমানতের খেয়ানত করা।
৪) ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা।
৪৫তম প্রশ্নঃ শির্কে লিপ্ত থাকা অবস্থায় কি কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে?
উত্তরঃ শির্কে লিপ্ত থাকা অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “তারা যদি শির্ক করত তবে তারা যত আমল করেছিল সব বরবাদ হয়ে যেত।” (সূরা আন’আমঃ ৮৮)
আল্লাহ আরো বলেন, “আল্লাহ তা’আলা তাঁর সাথে শিরক করাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন না এবং এর নিন্মস্তরের যে কোন অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। যে শির্ক করল সে (হেদায়েতের পথ থেকে) অনেক দূরে ছিটকে পড়ল।” (সূরা নিসাঃ ১১৬)
৪৬তম প্রশ্নঃ ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় দশটি। যথাঃ
১) ইবাদতে ক্ষেত্রে শির্ক করা।
২) মুশরিকদেরকে মুশরিক মনে না করা বা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদেরকে সঠিক পথের অনুসারী মনে করা।
৩) আল্লাহ তা’আলার নিকট পৌঁছার উদ্দেশ্যে কোন ‘মাধ্যম’ ধরে তার নিকট দুআ করা বা তার নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা অথবা তার উপর পরকালে নাজাত পাওয়ার ভরসা করা।
৪) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ শ্রেয়।
৫) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশিত কোন বিষয়কে মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন করে।
৬) দ্বীন-ইসলামের কোন বিষয়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা হেয় মনে করা।
৭) যাদু করা অথবা যাদু-তাবিজ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মনের মিলন কিংবা বিচ্ছেদ ঘটানো।
৮) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা।
৯) এ বিশ্বাস করা যে, বিশেষ কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত মেনে চলতে বাধ্য নন।
১০) ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে চলা, ইসলাম শিক্ষা না করা এবং ইসলাম অনুযায়ী আমল না করা।
৪৭তম প্রশ্নঃ এমন তিনটি বিষয় রয়েছে যেগুলো সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক। সে বিষয় তিনটি কী?
উত্তরঃ সে তিনটি বিষয় হলঃ ১) আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ২) দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ৩) নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করা।
৪৮তম প্রশ্নঃ তাগুত কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া যত কিছুর ইবাদাত করা হয় সবই তাগুতের অন্তর্ভূক্ত।
৪৯তম প্রশ্নঃ তাগুত কতটি এবং মূল তাগুতগুলো কী কী?
উত্তরঃ তাগুতের সংখ্যা অনেক। তবে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হল ৫টি।
৫০তম প্রশ্নঃ প্রধান প্রধান তাগুতগুলো কী কী?
উত্তরঃ সেগুলো হলঃ
১) শয়তান।
২) যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা হলেও তার কোন প্রতিবাদ করেনা বা তাকে ঘৃণা করেনা বরং তাতে রাজি থাকে।
৩) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের দিকে মানুষকে আহবান করে এবং এজন্য কাজ করে।
৪) যে ব্যক্তি ইলমে গায়ব তথা অদৃশ্যের খবর দিতে পারে বলে দাবি করে ।
৫) যে শাষক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদী আরব
দাঈ ও গবেষক, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব